রামদাসদী খালে বাধঁ, জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফসলি জমি। গন পিটুনিতে নিহত চেয়ারম্যান সেলিম খানের ক্ষমতার বলি এ খাল যা কৃষকের পেটে লাথি। ১১ বছর ধরে জলাবদ্ধতা।
একটা সময় বর্ষাকালে এক সময়ে এই খাল দিয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের নৌকা চলাচল করত । খালটি দিয়ে একসময় নদী থেকে জোয়ার-ভাটার পানি আসত। বর্ষার পানির সঙ্গে পলি এসে বাড়ত জমির উর্বরতা। এ খাল বেয়েই সরত আশপাশের এলাকার অতিরিক্ত পানি। খালটির ওপর নির্ভর করে প্রতিবছর ৩(তিন) ফসলের আবাদ করতেন খালের পাশের কৃষকগন। পশ্চিম রামদাসদী গ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খাল নামেই পরিচিত। শতবর্ষী খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল । কালের বিবর্তনে খালটি এখন মৃত প্রায় এক যুগ ধরে । খাল নির্ভর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ পানির যোগান হুমকির মুখে পড়েছে ।
জানা যায় ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের ৮(আট) নং ওর্য়াড এর পশ্চিম রামদাসদী মেঘনা নদীর পাড়ে সাবেক আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে রামদাসদী আশ্রয়ন প্রকল্প নামে অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু করা হয় । কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরে ড্রেজার দ্বারা বালু ভরাট করার সময় খালের পূর্ব সাইডে কোন সুরক্ষা বাঁধ (গাইড ওয়াল) তৈরী না করে খালটি একাংশ জোরপূর্বক রাতের আধারে ভরাট করা হয় ।
সংশ্লিষ্ট খালের সঙ্গে মেঘনা নদীর যে যোগাযোগ ছিল তা এখন বিচ্ছিন্ন । এখানে পূর্বে যে খাল ছিল তা এখন বুঝার উপায় নেই ।
এমনকি তৎকালীন আওয়ামিলীগ সরকার এর মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপুর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সেলিম খান (বালু সেলিম) অবৈধভাবে খালের সামনের অংশে বাধঁ তৈরী করে ফেলে যা এখন পরিত্যক্ত ।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খালটি রামদাসদী মৌজায় জেএল নং ৯৪ আরএস দাগ ২৭৭ সহ আশেপাশের অনেক দাগের মধ্যে থাকা খালটি অবস্থিত । মেঘনা নদীর সাথে প্রবাহিত খালটি ড্রেজার দ্বারা বালু ভরাট করার কারনে খালের (উত্তর-দক্ষিণ) সামনের একাংশে মিজান রাজ এর বাড়ী থেকে মেঘনা নদীর পাড় পর্যন্ত ২০০(দুইশত) মিটার প্রায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় । আর বাকি অংশ নাব্যতা হারিয়ে পানিপ্রবাহ হচ্ছে চরম বাধাগ্রস্ত এবং নদীর সাথে পানি প্রবাহ না থাকায় খালের বাকী অংশে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা থেকে যায় । ফলে খালের দূষিত পানি জলজ স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে ।
স্থানীয় সমাজসেবক বীরমুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, শতবর্ষী খালটি খননের মাধ্যমে সংশিষ্ট এলাকা জলাবদ্ধতা স্থায়ী ভাবে নিরসন করতে হবে এবং একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা পাবে। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী জরুরী ভাবে খাল খনন ও সংরক্ষণ করা হয় সেই দাবি জানিয়েছেন ।
খালটির ওপর নির্ভরতার প্রসঙ্গ তুলতেই স্থানীয় পশ্চিম রামদাসদী গ্রামের কৃষক মোতালেব গাজী ও গোপাল মজুমদার, উত্তম মজুমদার, লিটন মজুমদার বলেন, অনেক বছর ধরে কৃষিকাজ করছি। জমিতে তিন পর্যায়ে আলু, শাকসবজি, ধান, পাট ইত্যাদি আবাদ করতাম। উৎপাদিত ফসল স্থানীয় বাজারে বিত্রি করে সংসার চালাইতাম । এখন সংসার চালাইতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে । ফসল আবাদে খালটি আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির সময় আশ্রয়ন প্রকল্প এর বালু চাষকৃত জমিতে প্রবেশ করেছে এবং সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে । বছরের অধিকাংশ সময় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা থেকে যায়। গত কয়েক বছর আর তিন ফসল করা যাচ্ছে না। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকেরা ।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ২০-২৫ ফুট চওড়া খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ কিলোমিটার । দোকানঘর বাজারের সাথে সংযুক্ত চাঁদপুর-হাইমচর সিআইপি বেড়িবাঁধ এর পশ্চিম-দক্ষিণ একাংশ হয়ে .দোকানঘর রামদাসদী আশ্রয়ন প্রকল্প হয়ে রহিম হাওলাদার বাড়ি,বানিয়া বাড়ি,মনা মেম্বার বাড়ি, বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল কর বাড়ী. আবদুল্লাহ মিজি বাড়ী, ইন্দ্র মোহন মজুমদার(কবিরাজ) বাড়ী, আবুল জমাদার বাড়ী,খালেক মেম্বার বাড়ী, রহমান পাটওয়ারী বাড়ী,কালু পাটওয়ারী বাড়ী,,মিজান খান বাড়ী হয়ে শতবর্ষী খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে মিশেছে।
এলাকাবাসী এবং কৃষকদের একটাই দাবি যে, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খালটি রক্ষায় স্থায়ী ভাবে উদ্যেগ নিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত পুনঃ খনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেন।