কচুয়ায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন ২ অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী।
একজন মাসুদ সরকার পেশায় দলিল লিখক ও অন্যজন ইয়সিন শিকারী ক্ষমতাসীন দলের একজন কর্মী। তারা উভয়ে মিলে গত ৫-৬ বছরে নিজ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের ফসলী জমির মাটি ক্রয় করে রমরমা বালুর ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। সরকারি ভাবে অবৈধ ড্রেজার ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকলেও স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রমরমা বালুর ব্যবসা করে বিগত ৫বছরে প্রায় শতাধিক ডোবা, জমি ও পুকুর ভরাট করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন মো. মাসুদ সরকার ও ইয়াসিন শিকারী নামের দুই অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী। মাসুদ সরকার উপজেলার সফিবাদ গ্রামের মোস্তাক সরকারের পুত্র ও ইয়াসিন শিকারী একই গ্রামের সফিকুল ইসলামের পুত্র।
উভয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে বিগত ৫-৭ বছরে কচুয়া উপজেলার সফিবাদ, আইনপুর, বিতারা, উত্তর পালাখাল, খলাগাঁও, নোয়াদ্দাসহ বেশ কিছু স্থানে সাধারন কৃষকদের নানান ফন্দি ও কৌশল অবলম্বন করে কৃষকদের ঠকিয়ে জমির মাটি নাম মাত্র মূল্যে কিনে ওই জমি থেকে বালি উত্তোলন করে বিভিন্ন জমির মালিক পক্ষের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি লাভবান হচ্ছেন। এ যেন কৃষকের মাঠে বছর জুড়ে আলাউদ্দিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তারা। তাদের এমন অত্যাচারের কারনে সাধারন কৃষক ও ফসলী জমির মালিকরা অতিষ্ঠে জীবন-যাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান- মাসুদ সরকার পেশায় একজন দলিল লেখক ও আমিনতি পেশায় রয়েছেন। ওই পেশা বাদ দিয়ে বর্তমানে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে রমরমা বালুর ব্যবসা করে আসছেন। ফলে আশেপাশে ফসলী জমি গুলো বছর না যেতেই ভেঙ্গে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মাসুদ সরকার ও ইয়াসিন শিকারী এহেন কর্মকান্ডে ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না স্থানীয় ভুক্তোভোগী কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে কতিপয় লোকদের ম্যানেজ করে মাসুদ সরকার ও ইয়াসিন শিকারী বছর জুড়ে কৃষি ফসলী জমি নষ্ট করে বালু উত্তোলন করে কোটি টাকা নিজেদের পকেটে নিয়েছেন।
এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এলাকার বিভিন্ন স্থানে আবারো অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের জন্য কন্টাক্ট করছেন। তাদের এসব অবৈধ ড্রেজার ব্যাবসা চিরতরে বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তোভুগী এলাকাবাসী।
সরেজমিনে জানা গেছে- সম্প্রতিসহ গত কয়েকবছর যাবৎ মাসুদ সরকার ও ইয়াসিন শিকারী যৌথ ভাবে সফিবাদ গ্রামে ইমরান খন্দকারের ১১ লক্ষ টাকা চুক্তিতে জমি ভরাট, মাসুদ সরকার তার নিজ গ্রামে জমি ভরাট, সফিবাদ সাদার বাড়ির রাস্তার উত্তর পাশে পুকুর ভরাট, সফিবাদ গ্রামের গ্রাম পুলিশ পারুল বেগমের নতুন বাড়ি ভরাট মকবুল হোসেনের জমি ভরাট, শাহজালাল মিয়াজীর বাড়ি ভরাট, রুহুল আমিন মিয়াজীর নতুন এবং পুরান বাড়ি ভরাট, সফিবাদ পূর্বপাড়া ইয়াসিন মিয়ার নতুন বাড়ি ভরাট, মনির হোসেন এর জমি ভরাট, গিয়াসউদ্দিন এর বাড়ি ভরাট, পবন হাজীর পুকুর ভরাট। সফিউল্লাহ ভান্ডারির বাড়ি ভরাট, সূর্য খলিফার ভাই যুলহাসের বাড়ি ভরাট, ফরিদ মোল্লার বাড়ি ভরাট, জাকির হোসেন মোল্লার বাড়ি ভরাট, সেনা সদস্য খোরশেদ আলমের বাড়ি ভরাট, সহিদ ফকিরের বাড়ি ভরাট, ডা. সফিকুল ইসলাম (নলী) পুকুর ভরাট, প্রয়াত ফজলুর রহমান সরকারের পুকুর ভরাট, আব্দুল জলিল সরকারের পুকুর ভরাট, মোহন মিয়ার বাড়ি ভরাট, আলমগীর হোসেনের বাড়ি ভরাট, শাহীনা বেগমের বাড়ি ভরাট, শামছু সিকারীর বাড়ি ভরাট, সাদার বাড়ির আমির হোসেনের বাড়ি ভরাট, মোজাফফর হোসেনের গর্ত ভরাট।
আইনপুর গ্রামের ডা. নুরুল ইসলামের জমি ভরাট, জলিল ও খলিলের জমি ভরাট, আরোজা বেগমের জমি ভরাট, হরে কৃষ্ণ এর জমি ভরাট, সুলতান গাজীর জমি ভরাট, মজিবুর রহমান তালুকদারের জমি ভরাট, অলি উল্যাহ পাটওয়ারীর জমি ভরাট, আমিরুল ইসলাম পাঠানের জমি ভরাট, মজিব পাঠান এর জমি ভরাট, হাসিম পাঠানের পুত্র সফিক, জামাল, মিজান ও মজিব নতুন বাড়ি ভরাট। বিতারা গ্রামের হান্নান মৃধার বাড়ি ভরাট, শাখাওয়াত হোসেন মৃধার বাড়ি ভরাট, মজু মৃধার বাড়ি ভরাট, বাচ্চু মিয়ার বাড়ি ভরাট, তাজু হোসেনের বাড়ি ভরাট, আব্দুল কাদেরের বাড়ি ভরাট, জাকির হোসেনের বাড়ি ভরাট ও আবু তাহেরে বাড়ি ভরাট করেন। এমনি ভাবে আরো অসংখ্যা মানুষের বাড়ি ভরাটের সংবাদ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) বাপ্পী দত্ত রনি বলেন- ফসলী জমি নষ্ট করে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ বেআইনি। বর্তমানে আমরা কচুয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন তহসীলদারদের মাধ্যমে কোন কোন স্থানে ড্রেজারের কাজ চলছে এসব তথ্য নিয়ে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তা উচ্ছেদসহ শাস্তিমূলক আইনের আওতায় আনছি। তবে আগে যে বা যাহারা বালু উত্তোলন করছেন তাদের তালিকা করে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।।