1. admin@chandpurjomin.com : chadpuromin :
  2. editor@chandpurjomin.com : edtr :
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ অপরাহ্ন

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অবনতির কারণ

নিজ্বস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেটঃ সোমবার, ২৫ মার্চ, ২০২৪
  • ১৪২ পড়েছেনঃ

মরিয়ম জামান রোজা

শুরুতেই বিষয়টির সংজ্ঞায়ন করছি । সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে যে শব্দগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছি সেগুলো হলো:-তরুণ প্রজন্ম এবং অবনতির কারণ । প্রধানত তরুণ প্রজন্ম বলতে বোঝাচ্ছি, জাতীয় যুব নীতিমালা ২০১৭ এর মতে, ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীমার মধ্যবর্তী তরুণ -তরুণীকে এবং অবনতি হল চরিত্রের অধোগতি কিংবা চরিত্রের অধঃপতন ।

আজকের বিষয়টিকে ভালোভাবে বোঝানোর জন্য তিনটি ক্ষেত্র কে ব্যাখ্যা করছি:
(১) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
(২) মাদকাসক্তি
(৩) সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়
শুরুতেই আসা যাক প্রথম ক্ষেত্রটিতে অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে বুঝায় এমন এক ধরনের অনলাইন সেবা, প্ল্যাটফর্ম তথা ওয়েবসাইট যেখানে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে একটি কাল্পনিক সামাজিক সম্পর্ক ও গড়ে তোলা হয় ।
ভোর হলো দোর খোলো
খোলো খুকুমণি উঠোরে
ঐ ডাকে জুঁই শাকে
ফুল খুকি ছোটোরে
ছড়াটি কাজী নজরুল ইসলাম এর। কিন্তু বর্তমানে কাজী নজরুল ইসলামের কথাটি মান্য করার খুকুমণি কে আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন ভোর হয়ে খুকুমণিরা আর ঘুম থেকে উঠতে পারে না।

তাদের আর সেই সময় কই? সারারাত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চ্যাট করার পরে সারাদিন খুকু মণিরা পড়ে পড়ে ঘুমায় । আগে একটা সময় ছিল, যখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলতো আমি বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা জজ, ব্যারিস্টার হবো। কিন্তু বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি এমন একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে এখন তারা বলে আমি ঃরশঃড়শবৎ, লাইকি স্টার কিংবা ইউটিউবার হতে চাই। আর এই মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশার অন্ধকার। বর্তমানে এই চিত্রটা এতটাই ভয়াবহ হয়েছে যে পাবলিক পরীক্ষার উত্তর লেখার ক্ষেত্রে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ব্যবহৃত ংযড়ৎঃ াবৎংরড়হ এর আলাপ -চাহিদা শোভা পায়। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের লেখাপড়া কে কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়, সোনালী ভবিষ্যৎ। শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি তথ্যচিত্র তুলে ধরছি, গ্লোবাল ডেটা ফার্ম স্ট্যাট্সিটার এর তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪কোটি ৪৭ লাখ যার মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ এবং প্রতি ১২ সেকেন্ডে একটি করে ফেসবুক একাউন্ট খোলা হচ্ছে যা কিনা বাংলাদেশের জন্ম হারের চেয়েও বেশি । এখানে আর কিছু বলার অবকাশ থাকে না যে বর্তমান তরুন প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঠিক কতটা আসক্ত।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তি শুধুমাত্র তরুণ প্রজন্মের সময় কিংবা লেখাপড়া কেড়ে নিচ্ছে না সাথে সাথে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করছে। দৈনিক সময়ের আলো ১৪ই অক্টোবর ২০২১ এর একটি পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আসক্তির কারণে তরুণদের খিটখিটে মেজাজ, হিংস্রতা, চোখের অসুখ, নার্ভের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে। এমনকি মানসিক ভারসাম্যহীনতার মত জোটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে এই প্রজন্মের। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট কৃত আসক্তি কিভাবে বর্তমান প্রজন্মকে অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে অর্থাৎ মাদকাসক্তিতে।
মাদকাসক্তি বলতে বিভিন্ন ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য যেমন ড্রাগস, হিরোইন ইত্যাদিতে আসক্ত হওয়াকে বোঝায়। মাদকে আসক্ত ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত বলে।

মাদকাসক্তিকে একটি সামাজিক বিপর্যয় বা অবক্ষয় বলা যেতে পারে। আজকের তরুণ প্রজন্ম আগামী বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। বাংলাদেশের যুব সমাজ যেখানে শিক্ষা ও জ্ঞান আহরণে উদ্যমী হওয়ার কথা সেখানে তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদকদ্রব্যের মতো ভয়াবহ অপরাধে, যা দেশের জন্য অশনি সংকেত। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষ যেমন শারীরিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতির শিকার হয় তেমনি মানসিকভাবে ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। একজন মাদকাসক্ত তরুণ বেশিরভাগ সময় খিটখিটে মেজাজে থাকে, বিচার ,বিবেচনা বোধ হারায় ,পড়াশোনা ও অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ড করার ইচ্ছা ও তার চলে যায়। সাধারণত মাদকাসক্তির প্রধান কারণগুলো হলো:-মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মেলামেশা, প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশ হওয়া ,পারিবারিক কলহ,প্রকাশিত ফলাফল অর্জন না করতে পাওয়ার দুঃখ ও ক্ষোভ, পারিবারিক সুশাসনের অভাব ইত্যাদি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে, বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৭.৮ মিলিয়ন মানুষ মাদকাসক্ত। যার মধ্যে ৮০ শতাংশই তরুণ। এ যেন এক মরণ ফাঁদ। যে এই ফাঁদে একবার পড়ে যায় সে হয়তো আর কোনদিনও সুস্থ -স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না ।

শুরুটা ধূমপানের মাধ্যমে হলেও ধীরে ধীরে অন্যান্য মাদক গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তারা এবং এক পর্যায় বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন চুরি-ডাকাতি, খুন, স্কুল থেকে পালানো ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়ে। প্রাণঘাতী এই আসক্তি থেকে সমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে সবার আগে সচেতন হতে হবে পরিবারকে। বাড়ির কি সোনা কাদের সাথে মেলামেশা করছে সে সম্পর্কে খোঁজ দিতে হবে। এবং মাদকাসক্তদের কে এই ভয়াবহ মৃত্যুকূপ থেকে যথাযথ চিকিৎসা এবং সঠিক কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে বাঁচাতে হবে।

আমাদের আজকের বিষয়বস্তু তিন নাম্বার ও সর্বশেষ ক্ষেত্রটি হলো:- সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়।
অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ক্ষয়প্রাপ্তি। সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ধৈর্য, উদারতা, অধ্যবসায় ,নান্দনিক সৃজনশীলতা, দেশপ্রেম, সৌজন্যবোধ ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী লোপ পাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বলে। সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

এর মধ্যে প্রধান কারণ গুলো হচ্ছে: পরিবারের সচেতনতা ও সুশাসনের অভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের অভাব, ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি কম গুরুত্ব ইত্যাদি। আজকের তরুণরা আগামীর ভবিষ্যৎ ।তাদের বেড়ে ওঠা ও সুশিক্ষার উপর আগামী রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল । কিন্তু কোথায় তাদের নৈতিকতা কোথায় তাদের আদর্শ ? সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের সূত্রপাত হয় মূলত পরিবারের সুশাসন ও সচেতনতার অভাবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এক একটি পরিবার তাদের পরবর্তী প্রজন্মের চরিত্রের জন্য প্রভাবশীল ,গঠন মূলক শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। একটি সুস্থ সমাজের প্রতিটি পরিবার একটি সাধারণ সাংস্কৃতিক প্রভাব দ্বারা নির্দেশিত এবং পরিচালিত হয়। কিন্তু একটি অস্বাস্থ্যকর সমাজে বসবাসকারী পরিবার সাংস্কৃতিক প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার প্রভাব শিশুদের উপরও পড়ে। এবং এর ফলস্বরূপ দেখা যায় শিশুটি তার নৈতিক মূল্যবোধকে হারিয়ে ফেলে। সে বুঝতে পারে না কোনটি তার সংস্কৃতি এবং কোনটি নয়। অপসংস্কৃত এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈদেশিক বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব দেশে আবির্ভাব হওয়ার কারণে কিশোররা নিজের দেশীয় সংস্কৃতিকে ভুলে বৈদেশিক সংস্কৃতির দিকে বেশি আকৃষ্ট হয়। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতা ও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতার ফলে এক দেশের সংস্কৃতি সহজে অন্য দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।

ফলে ভালো সংস্কৃতির সাথে সাথে খারাপ সংস্কৃতি ও দেশে প্রবেশ করছে যা তরুণরা খুব সহজে ধরতে পারছে না। এবং ফলস্বরূপ তারা সেই বৈদেশিক খারাপ সংস্কৃতির দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং দেশীয় সংস্কৃতি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাইতো আজ তারা বিভিন্ন বৈদেশিক গান কেই নিজেদের পছন্দের গানের তালিকায় জায়গা দিয়ে দিয়েছে। ভুল মানুষকে আইডল হিসেবে বিবেচনা করে তারা তাদের জীবনের অর্ধেকটা সময় পার করে দিয়েছে। জীবনের অর্ধেকটা সময় চলে যাওয়ার পর তার উপলব্ধি করতে পারে আমি কিসের পিছনে আমার জীবনটাকে নষ্ট করলাম। এক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করে ধর্মীয় শিক্ষা ও পরিবারের সচেতনতা। ছোটবেলা থেকেই একটি শিশু যদি নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে তাহলে পরবর্তীতে তাদের কোনদিনও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এর শিকার হতে হবে না।

লেখক পরিচিতি ঃ
মরিয়ম জামান রোজা।
৯ম শ্রেণী
সেকশন- এ
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার্স স্কুল এন্ড কলেজ।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
All Rights Reserved ©2024
Theme Customized By LiveTV